সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪২ অপরাহ্ন
ইন্দুরকানী প্রতিনিধি॥ পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার চরনী পত্তাশী গ্রামের আশিক (২৫) নামে এক যুবককে হাত-পা বেঁধে বিবস্ত্র করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। আর এ ঘটনাটি ঘটেছে ইন্দুরকানীর পার্শ্ববর্তী উপজেলা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের চিংড়াখালী ইউনিয়নে।
নির্যাতিত যুবক ইন্দুরকানী উপজেলার চরনী পত্তাশী গ্রামের কবির জোমাদ্দারের ছেলে ও ১৭নং পত্তাশী বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি।
এক নারী এ ঘটনার ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার পর গতকাল শুক্রবার থেকে এটি ভাইরাল হয়ে পড়ে ফেসবুকে। ছবি ও ভিডিওর দৃশ্যগুলো দ্রুত ভাইরাল হলে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। ঘটনার পর পুলিশের একটি টিম সোহেল খানকে আটকের জন্য তার বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি। পরে তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় ইউপি সদস্য সোহেল খানসহ চারজনের নামে গত বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে মোরেলগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। সোহেল খান মোড়েলগঞ্জ উপজেলার চিংড়াখালী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ও বড় জামুয়া গ্রামের মৃত খলিল খানের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পার্শ্ববর্তী ইন্দুরকানী উপজেলার চরনী পত্তাশী গ্রামের কবির আকনের ছেলে আবদুস সবুর আকনের একটি মোবাইল ফোন মঙ্গলবার চুরি করে নেয় মেম্বার সোহেল খানের ছোট ভাই রুবেল খান। চুরি যাওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের জন্য বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মেম্বার সোহেলের বাড়িতে যান মোবাইল মালিক আবদুস সবুরের বন্ধু আশিক জোমাদ্দার। সোহেলের কাছে মোবাইলটি উদ্ধারের দাবি করলে আাশিক ও সোহেলের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
এক পর্যায়ে মেম্বার সোহেল খানের নির্দেশে তার ক্যাডার বাহিনী আশিককে আটক করে তার হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে। এতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থান বেধড়ক পিটুনিতে রক্তাক্ত পরে। পরে গুরুতর আহত আশিককে উদ্ধার করে স্বজনরা মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। এ ঘটনা শোনার পর আশিকের নিজ এলাকা পত্তাশী ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
সোহেলের ব্যাপারে খোঁজ নিতে গেলে মোড়েলগঞ্জ থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, চিংড়াখালী ইউনিয়ন যুবলীগের বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইউপি সদস্য সোহেল খানের বিরুদ্ধে কক্সবাজারের উখিয়া থানায় একটি মাদক মামলা ও মোরেলগঞ্জ থানায় হত্যা ও মাদকসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার নামে ৭টি মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন অপরাধে বহুবার জেলও খেটেছেন তিনি।
তবে ইন্দুরকানী উপজেলার আশিক জোমাদ্দার (২৫) নামে এক যুবককে বিবস্ত্র করে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে আবারও আলোচনায় উঠে আসে চিংড়াখালী ইউনিয়নের ত্রাস সোহেল খানের নাম। এ ঘটনার পর তাকে ধরতে পুলিশি তৎপরতা শুরু হলে গা ঢাকা দেন তিনি।
নির্যাতনের শিকার আশিকের পাড়া প্রতিবেশিরা জানান, সোহেল মেম্বারের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেক অনুনয় বিনয় করে আশিক। কিন্তু তাতেও রক্ষা পায়নি সে।
এ বিষয়ে মোড়েলগঞ্জ থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ইউপি সদস্য সোহেল খানের এলাকায় নানা অপকর্ম রয়েছে। ওই যুবককে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। সোহেলকে আটকের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
Leave a Reply